উন্নত জাতি গঠনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অপরিসীম। ভবিষ্যতে তারাই দেশের হাল ধরবে এবং দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে কাজ করবে। তাই তাদের উপর আমাদের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। করোনাকালীন সময়ে চারদিকে শঙ্কার আবহ শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত করেছে। ফলে মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সব থেকে বেশি প্রভাব ফেলেছে খাবারে অনীহা, ঘুমের সমস্যা, দুশ্চিন্তা-ভয় বা আতঙ্কের মধ্যে থাকা, কোনো কাজে মনোযোগ দিতে না পারা।

আর এগুলো ভর করার মূল কারণ হলো শিক্ষার্থীদের একাকিত্ব বা বিষণ্নতা। ফলে পরিবার, আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুদের সাথে দূরত্ব রেখে চলে তারা। এবং দেখা যায় তারা প্রতিনিয়তই অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। সন্তানের প্রতি বন্ধুসুলভ আচারণ করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, অভিভাবকরা অল্পতেই ছেলে-মেয়েদের বকাঝকা করে থাকেন। যা তাদের ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত বকাঝকা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের সংকট ও সম্ভাবনা বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা যাতে মানসিক চাপমুক্ত পরিবেশ পায় সেজন্য পারিবারিক বন্ধন মজবুত রাখতে হবে। তাদের কাছাকাছি থাকতে হবে। মানুষিক বিকাশে বিভিন্ন বই পড়া, বাগান করা, শিল্পচর্চা ও খেলাধুলায় তাদের উৎসাহিত করতে হবে। কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যাতে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের মনকে প্রফুল্ল রাখতে সময় দিতে হবে এবং ক্যারাম, দাবা, লুডু, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিসের মতো ইনডোর গেমের ব্যবস্থা করতে হবে।

ফলে তাদের নেট আসক্তি কমে যাবে। আমাদের সমাজে প্রচলিত আরেকটা খারাপ দিক হলো অন্য কারো সাথে নেতিবাচক তুলনা করা। এটা আমাদের বেশিরভাগ অভিভাবক করে থাকেন। এমন কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।অভিভাবকদের আরেকটি সমস্যা হলো কোনো বিষয় সন্তানের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া। এই জোর করে চাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বরং তাদের স্বপ্নের সারথী হয়ে পাশে থাকতে হবে প্রতিটা মুহূর্তে।

করোনা মহামারির এ সময়ে শিশুদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে ও যত্নশীল হতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সাহিত্যচর্চা, শিল্পচর্চা, বাগান করা বা পছন্দের প্রাণী পোষার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং সমাজকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে আসতে হবে।

নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা ও নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এগুলো শিক্ষার্থীদের মানুসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। কোনো বাধাই চিরস্থায়ী নয়। এই অসময় কেটে যাবে। আঁধার কেটে আলোর দেখা মিলবে নিশ্চয়ই। সব অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাবে স্বপ্নের পথে।